কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঃ
অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ভারত থেকে নেমে আসা নদীর পানির তোড়ে ক্রমেই ফুঁসে উঠেছে কুমিল্লার গোমতী নদী। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারত থেকে উজান থেকে নেমে আসা নদীর পানিতে ক্রমেই ফুঁসে উঠেছে কুমিল্লার গোমতী নদী। সেই সঙ্গে অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট পানির তোড়ে কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন,কুমিল্লার গোমতীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার অনেক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকায় লাখ-লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি।বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক ও ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।উঁচু জমিতে করা আমন ধানের বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।
ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডাকাতিয়া নদীর পানিও বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া-চিওড়া ও বক্সগঞ্জ-গুনবতী আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নৌকায় করে বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধার করে নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলেও বেশির ভাগ মানুষ এখনো পানিবন্দি।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন,টানা বৃষ্টির ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে বুধবার সকাল থেকে নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। সারাদিন ভারি বর্ষণের ফলে আরো অবনতির আশঙ্কায় উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহুতল ভবনকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
আট জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ লাখ মানুষ
স্থানীয়রা জানিয়েছেন,গোমতীর স্রোতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার আসমানিয়া বাজারে স্থানীয়ভাবে কাঠ ও স্টিল দিয়ে করা সেতুটি ভেঙে গেছে।৪০ বছরে গোমতীর এত স্রোত দেখেনি মানুষ।বুড়িচং বাবুবাজার এলাকায় নদীর পানি প্রায় পাড় ছুঁই ছুঁই।কোথাও পানি বাঁধ উপচেপড়ার মতো অবস্থা।
বাড়ছে মৃত্যুর হার
স্থানীয়রা সারারাত বাঁধের বিভিন্ন অংশ মেরামত করেছে।বাঁধ যাতে ভেঙে না যায়, তার জন্য প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।তারা জানাচ্ছেন, পানির তোড় বেশি থাকায় তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।তবে তারা ঘুম হারাম করে বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন। কারণ,বাঁধ ডুবে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোমতী পাড়ের লাখো মানুষ।বড় ধরনের দুর্যোগ নেমে আসবে গোমতী পারের জনপদে।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে,কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গ্রামগুলোতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।এসব গ্রামের কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও আবার বুক অবধি পানি উঠে গেছে।ওই উপজেলার নালগড় গ্রামের শত শত মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও গবাদি পশু নিয়ে পায়ে হেঁটে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে যাচ্ছেন।
No comments:
Post a Comment